বৃহস্পতিবার, ৩১ Jul ২০২৫, ০৮:২৪ অপরাহ্ন

মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম না পেয়ে বিপাকে কৃষক

রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ রাজবাড়ীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার হাজার হাজার কৃষক। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা।

জানা গেছে, দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজবাড়ী জেলা। দেশে উৎপাদিত মোট পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ উৎপাদন হয় এ জেলা থেকে। এ বছর বিঘা প্রতি পেঁয়াজ আবাদে চাষিদের সার, বীজ, কীটনাশক, জমি চাষ ও মজুরিসহ খরচ হয়েছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিঘা প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৪০-৫০ মণ।

প্রতি মণ পেঁয়াজ মান ভেদে পাইকারি ১১০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি উৎপাদিত পেঁয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫৫ হাজার টাকা। এতে বিঘাতে মণ প্রতি লোকসান হচ্ছে ৫ হাজার টাকারও বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, জেলার পাঁচ উপজেলায় এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে। মুড়িকাটা পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৭ হাজার ৮০০ টন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমির পেঁয়াজ। ফলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পেঁয়াজ কম পাওয়া যাবে। গত বছর হালি ও মুড়িকাটা দিয়ে রাজবাড়ীতে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল। তবে হালিকাটা পেঁয়াজ উঠলে এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

দৌলতদিয়া উত্তর পাড়া এলাকার পেঁয়াজচাষি মহিউদ্দিন শেখ বলেন, আমি এ বছর দুই একর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম।প্রতি বিঘায় আমার খরচ পড়েছে ৬০-৬৫ হাজার টাকা। বর্তমানে পেঁয়াজের যে বাজার দর তাতে আমার বিঘা প্রতি ৫-১০ হাজার টাকা লোকসান হবে। এত কষ্টে করে টাকা খরচ করে পেঁয়াজ লাগিয়ে যদি দামটাই না পাই তাহলে আমরা চলবে কীভাবে?

পেঁয়াজচাষি আজিজুল মন্ডল বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে আমার দেড় একর জমির পেঁয়াজের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার বিঘা প্রতি ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমার এ বছর উৎপাদন খরচই উঠবে না। সরকারতো পেঁয়াজ চাষিদের কোনো আর্থিক সহায়তাও করছে না।

বালিয়াকান্দির জামালপুর এলাকার পেঁয়াজচাষি হায়দার আলী বলেন, এ বছর শুরু থেকেই মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কম। প্রতি মণ ১১০০-১২০০ টাকা করে পাচ্ছি। তারপর আবার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বেচতে গেলে বস্তার জন্য দুই কেজি, ধলতা দুই কেজি বাদ দেয়। এতে মণ প্রতি চার কেজি বাদ যাওয়াতে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। এক মণ পেঁয়াজ দিলে ৩৬ কেজির দাম পাচ্ছি।পাইকারি বাজারের এই পদ্ধতি বাদ দেওয়া উচিত।

আরেক পেঁয়াজচাষি ইদ্রিস মিয়া বলেন, সরকার আমাদের সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদান করলে ও ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করলে আমরা সাধারণ চাষিরা পেঁয়াজের ভালো দাম পাব। অন্তত উৎপাদন খরচটা উঠাতে পারব।

রাজবাড়ী বাজারে পাইকারি মার্কেটের মোস্তাক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারি মো. মোস্তাক আহমেদ বলেন, মাত্র মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠেছে। পেয়াঁজের বাজার কেমন হবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আর কিছু দিন যাক তাহলে বোঝা যাবে। তবে পাইকারি বাজারে বর্তমানে ১১০০-১২০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আসলে মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এস এম শহীদ নূর আকবর বলেন, রাজবাড়ীতে প্রতি বছর ৫ হাজার হেক্টরের ওপরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর বেশির ভাগই উৎপাদন হয় গোয়ালন্দ ও বালিয়াকান্দিতে। এ বছর ৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে ১ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার দর ৩২-৩৪ টাকা কেজি। দাম একটু কম হলেও কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, চাষিরা যেন লাভবান হন সেজন্য সব সময় তাদের কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া লাভজনক উৎপাদনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেও বলা হয়ে থাকে তাদের।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com